Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

মাটি থেকে সৃষ্ট মানুষ : থাকতে হবে মাটির গুণ

 

মাটি থেকে সৃষ্ট মানুষ  থাকতে হবে মাটির গুণ
মাটি থেকে সৃষ্ট মানুষ  থাকতে হবে মাটির গুণ


আমাদের মূল হল মাটি। আবার ফিরে যাবো মাটির বুকে। এখানে আসার অর্থই তাকে একদিন মাটির ঘরে যেতে হবে।। আসার পর থেকেই যাওয়ার সময় এগুচ্ছে। একজন লোক আসার পর থেকে আমরা দেখছি সে বড় হচ্ছে। কিন্তু আসলে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যাওয়ার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে।

সুতরাং জীবন নামক মধ্যবর্তী এই সময়ে মাটির যে সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে আমরা তা নিজেদের মাঝে ধারণ করবো; এটা নিয়ম। ধারণ করতে না পারলে তা জুলুম হিসেবে প্রকাশ পাবেই। তখন হয় নিজের প্রতি জুলুম হবে কিংবা অন্যের প্রতি জুলুম হবে।

মাশায়েখ বলেছেন, মাটির মাঝে এমন চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যে মানুষটি এগুলো নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবে সে আল্লাহ তাআলার প্রিয় হয়ে উঠবে। আর যে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়, সে তো উভয় জাহানের বাদশাহ বনে যায়।


َالْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. إِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ 

 بارك الله لنا ولكم في القرآن  العظيم ونفعني وإياكم بما فيه من الآيات والذكر الحكيم وجعلني وإياكم من الصالحين. أقول قولي هذا وأستغفر الله لي ولكم فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ.


ইতিকাফকারীর উদাহরণ

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার উদ্দেশ্যে আমাদেরকে তাঁর ঘরে নিয়ে এসছেন, এটা তাঁর একান্ত দয়া ও মায়া। এজন্য তাঁর শোকর আদায় করছি—আলহামদুলিল্লাহ।

আতা আল-রাসানি রহ. বলেন, ইতিকাফকারীর উদাহরণ সে বান্দার মত, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে

لَا أَبْرَحُ حَتَّى تَغْفِرَ لِي

হে আল্লাহ! যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা কর, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করবো না। (শারহুল ইব্ন বাত্তাল আলাল বুখারী : ৪/১৮২)

আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেন এবং আমাদেরকে পাক-সাফ জিন্দেগী দান করেন। আমীন।

আমরা মাটি থেকে সৃষ্ট

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। আল্লাহ বলেন

إِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ

ওদেরকে আমি অতি নগণ্য আঠাল মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। (সূরা সাফফাত : ১১)

ইবলিসও আল্লাহকে বলেছিল, হে আল্লাহ! আমি কেন আদমকে সিজদা করবো?

 أَنَا۠ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ

আমি তো তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে। (সূরা আ'রাফ : ১২)


আগুন নয়; মাটির দাম বেশি

ইবলিস মনে করেছিল, মাটির চাইতে আগুনের দাম বেশি। বাস্তবতা হলো, আগুনের চাইতে মাটির দাম বেশি। কেননা, আগুন ছাড়া মানুষ চলতে পারে, যদিও কষ্ট হয়। কিন্তু আল্লাহর কোনো সৃষ্টি মাটি ছাড়া চলতে পারে না।

বলা হয়ে থাকে, আল্লাহর সৃষ্টি আঠার হাজার। কিন্তু মাখলুকাতের এই নির্দিষ্ট সংখ্যা না কুরআনে আছে, না কোনো সহীহ হাদীসে। মূলত আল্লাহ তাআলা অগণিত মাখলুক পয়দা করেছেন। জলে ও স্থলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাখলুক আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষের জানার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য মাখলুক। আল্লাহ তাআলা কত ধরনের মাখলুক সৃষ্টি করেছেন তার নির্দিষ্ট সংখ্যা একমাত্র আল্লাহই জানেন। পোকা-মাকড়ও তাঁর সৃষ্টি। আর তাঁর কোনো সৃষ্টিই মাটি ছাড়া, মাটি থেকে উৎপাদিত খাদ্য ছাড়া জীবন যাপন করতে পারে না। 

সুতরাং বোঝা গেলো, আগুন নয়; বরং মাটির দাম বেশি।


জুলুম কাকে বলে?

كل شيء يرجع إلى أصله

প্রত্যেক বস্তুই তার মূলের দিকে ফিরে যায়।

এটা একটা নিয়ম। নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করা জুলুম। কেননা, জুলুম কাকে বলে? ভাষাবিদগণ বলেন

وضع الشيء في غير محله

কোনো বস্তুকে তার আসল স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রাখার নামস জুলুম। অর্থাৎ, নিয়মের বাইরে কিছু করলেই তা জুলুম হয়।


মানুষ মারা গেলে মাটিতে দাফন করতে হয় কেন?

এজন্যই আল্লাহ নিয়ম করেছেন, মানুষ মারা গেলে তাকে মাটিতে দাফন করে দিতে হবে। মানবসৃষ্টির শুরু থেকেই এ নিয়ম চলে আসছে। 

আদম আ.-এর দুই সন্তান ছিল হাবিল এবং কাবিল। একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে কাবিল অন্যায়ভাবে হাবিলকে মেরে ফেলে। এখন ভাইয়ের লাশ কী করবে, এ নিয়ে কাবিল কিছু ভেবে পাচ্ছিল না। তখন আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন, যা মাটি খুঁড়ছিল, যাতে তাকে দেখাতে পারে, কীভাবে সে ভাইয়ের লাশ গোপন করবে। তখন একটি কাক আরেকটি মৃত কাকের নিকট এসে তার উপর মাটি দিতে দিতে সেটাকে ঢেকে দিল। এটা দেখে কাবিল বলতে লাগল

يَا وَيْلَتَا أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَٰذَا الْغُرَابِ

হায়! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না। (সূরা মায়েদা : ৩১)

সে দিন থেকে নিয়ম হয়ে গেছে, মাটির মানুষ মারা গেলে তাকে মাটিতেই দাফন করে দিতে হবে।

হিন্দুরা মৃতদেহ আগুনে পুড়ে ফেলে

হিন্দুরা মৃতদেহ আগুনে পুড়ে ফেলে। ভেবে দেখুন, মানবদেহের সঙ্গে এটা কতটা পৈশাচিক আচরণ! হিন্দুধর্মে এর চেয়েও অমানবিক একটা প্রথা ছিল, সতীদাহ প্রথা। নারীকে জোর করে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা হত। এই জঘন্য প্রথা এখনও কিছু জায়গায় আছে।


ইসলামে পৈশাচিকতার স্থান নেই

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আআলা আমাদেরকে তাঁর মনোনীত ধর্ম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। যেখানে কোনো পৈশাচিকতার স্থান নেই।

إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

আমরা আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাই। (সূরা বাকারা : ১৫১)

তিনি আমাদের জন্য কত সম্মানজনক নিয়ম করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আবার আমাদের মরদেহ মাটির কাছে ফিরিয়ে নেন। আলহামদুলিল্লাহ।


মাটির গুণ ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে হবে

যেটা বলতে চেয়েছিলাম, আমাদের মূল হল মাটি। আবার ফিরে যাবো মাটির ঘরে। এখানে আসার অর্থই তাকে একদিন মাটির ঘরে যেতে হবে। আসার পর থেকেই যাওয়ার সময় এগুচ্ছে। একজন লোক আসার পর থেকে আমরা দেখছি সে বড় হচ্ছে। কিন্তু আসলে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যাওয়ার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে।

সুতরাং জীবন নামক মধ্যবর্তী এই সময়ে মাটির যে সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে আমরা তা নিজেদের মাঝে ধারণ করবো; এটা নিয়ম। ধারণ করতে না পারলে তা জুলুম হিসেবে প্রকাশ পাবেই। তখন হয় নিজের প্রতি জুলুম হবে কিংবা অন্যের প্রতি জুলুম হবে।

মাশায়েখ বলেছেন, মাটির মাঝে এমন চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যে মানুষটি এগুলো নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবে সে আল্লাহ তাআলার প্রিয় হয়ে উঠবে। আর যে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়, সে তো উভয় জাহানের বাদশাহ বনে যায়।


অন্যের প্রতি জুলুমও প্রকারন্তরে নিজের প্রতিই জুলুম

বস্তুত অন্যের প্রতি জুলুমও প্রকারন্তরে নিজের প্রতিই জুলুম। যেমন, উপরের দিকে থুথু মারলে তা নিজের গায়ে এসে পড়ে। অনুরূপভাবে অপরের সঙ্গে অন্যায় করলে তাও নিজের ওপরই পড়ে। দুনিয়াতে না হলেও আখেরাতে তা নিজের জন্য মুসিবত হয়ে দাঁড়াবেই। এজন্যই আল্লাহ তাআলা দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সূরা আ'রাফ : ২৩)


মাটির  প্রথম গুণ: গোপন করা

মাটির একটি গুণ হল, গোপন করা, লুকিয়ে ফেলা, ঢেকে দেয়া। আমরা পেশাব করি, সে শুষে ফেলে। আমরা হাগু করি, সে ধীরে ধীরে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে গোপন করে ফেলে। আমাদের দেহটাও মাটি লুকিয়ে ফেলে।

ফিকহের কিতাবে এসেছে, মনে করুন, এক ব্যক্তি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গেল যে, তার কাছে পরিধেয় কাপড় নেই। ব্যবস্থাও নেই। তাহলে সে কিভাবে নামাজ পড়বে? 

ফকিহগণ বলেন, তখন সে তাশাহহুদের সুরতে বসবে। তারপর আশেপাশে বালি কিংবা মাটি যা পায় তা দিয়ে যতদূর সম্ভব সতর ঢেকে নিবে। তারপর নামাজ পড়বে। দেখুন, এহেন অবস্থায়ও মাটি আমাদের লজ্জা ঢেকে দেয়ার ভূমিকা পালন করছে।

সুতরাং একজন মুমিনেরও গুণ হওয়া উচিত; অপর মুমিনের দোষ লুকিয়ে রাখবে। লজ্জিত হতে হয় এমন কিছু কারো সামনে প্রকাশ করবে না।

মুসলমানের দোষ গোপন করা

হাদীস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يا مَعْشَرَ مَن آمن بلسانِه ولم يَدْخُلِ الإيمانُ قلبَه ، لا تغتابوا المسلمينَ ، ولا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِم ، فإنه مَن تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيه المسلمِ ، تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَه ، ومَن تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَه ، يَفْضَحْهُ ولو في جوفِ بيتِه

হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ, যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। (আবু দাউদ : ৪৮৮০)

অন্তর যার ঈমানশূন্য

লক্ষণীয় বিষয় হল, নবীজি ﷺ কথাগুলো সাধারণভঙ্গিতে বলে দিতে পারতেন। বলতে পারতেন যে, তোমরা এই-এই কাজগুলো করো না। কিন্তু না, তিনি প্রথমে ভূমিকা দিলেন, বললেন, 'হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করে নি!' 

বলুন তো, এজাতীয় লোককে কী বলা হয়? মুনাফিক।

অর্থাৎ, নবীজি ﷺ যেন বুঝাতে চেয়েছেন, যদি তুমি মুমিন হও, তোমার অন্তরে যদি ঈমান থাকে তাহলে এ কাজগুলো তোমার জন্য একেবারে নিষেধ। যদি নিষেধ অমান্য করে এ কাজগুলো কর তাহলে বোঝা যাবে, তুমি মুখে এনেছ ঠিক, কিন্তু অন্তর তোমার ঈমানশূন্য। হে আল্লাহ, পানাহ চাই।


মুমিন অপরের দোষ গোপন রাখে

ফুযাইল ইবনে ইয়ায রহ. বলেন

 ‌الْمُؤْمِنُ ‌يَسْتُرُ ‌وَيَنْصَحُ، ‌وَالْفَاجِرُ ‌يَهْتِكُ ‌وَيُعَيِّرُ 

মুমিন ব্যক্তি দোষ গোপন রাখে এবং সদুপদেশ দেয়। আর পাপিষ্ট ব্যক্তি গোপন বিষয় ফাঁস করে দেয় এবং পরনিন্দা করে। (জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম : ১/২২৫)


গীবত করা 

আলোচ্য হাদীসে বলা হয়েছে,

لا تغتابوا المسلمينَ ، ولا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِم

'তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না।'

মূলত মুসলমানের দোষ প্রকাশের একটা মাধ্যম হল, গীবত করা। অর্থাৎ, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা। হতে পারে দোষটি তার মধ্যে আছে। কিন্তু এই আলোচিত দোষটির কথা শুনলে সে নির্ঘাত মনে ব্যথা পাবে। তাহলে এটাই গীবত।


গীবত করা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য

শাইখুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানী দা. বা. বলেন, অনেক সময় দীনী মজলিসকেও ব্যভিচারের মজলিস থেকেও খারাপ বানিয়ে ফেলি। প্রশ্ন হল, কিভাবে?

তিনি বলেন, এক হাদীসে এসেছে, হাদীসটি সনদের দিক থেকে তেমন মজবুত না হলেও অর্থের দিক থেকে বিশুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, 'গীবতের গুনাহ জিনা-ব্যভিচারের গুনাহর চেয়েও মারাত্মক।' 

সুতরাং দীনের মজলিসে বসে গীবত করা মানে মজলিসটিকে ব্যভিচারের মজলিস থেকেও খারাপ বানিয়ে ফেলা।


প্রশ্ন হল, এর কারণ কী?

উত্তর হল, আল্লাহ না করুন, যদি কেউ ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে নিলে আল্লাহ চাহে তো গুনাহটি মাফ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে গীবত এমন মারাত্মক গুনাহ যে, গুনাহটির ক্ষমা ততক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে ক্ষমা করে দেয়। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, বাবুল গীবাত : ৮/ ৯২)


চোগলখুরি করা গীবতের চেয়েও জঘন্য

মুসলমানের দোষ প্রকাশের আরেকটি মাধ্যম হল, চোগলখুরি করা। ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলে লাগানো হচ্ছে চোগলখুরি। চোগলখুরি গীবতের চেয়েও জঘন্য। কারণ, চোগলখুরির উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিরোধ তৈরি করা। আর গীবতকারীর মধ্যে এই উদ্দেশ্য থাকা জরুরি নয়। অন্যের দোষ, যা বাস্তবেই তার ভেতর আছে, তা বলা গীবত। কিন্তু চোগলখুরি অন্যের নামে মিথ্যা কথা বলার মাধ্যমেও হতে পারে।


গীবত কিংবা চোগলখুরি মানুষ কেন করে?

গীবত কিংবা চোগলখুরি মানুষ সাধারণত দুই কারণে করে।

এক. হিংসা কিংবা শত্রুতার বশবর্তী হয়ে।

দুই. অন্যের কাছে নিজেকে আপন করে তুলতে, নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় গীবত কিংবা চোগলখুরি করে।


গীবত ও চোগলখুরী ঈমানকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে

ওসমান ইবনে আফফান রাযি. বলেন

الْغِيبَةُ ‌وَالنَّمِيْمَةُ ‌يَحُتَّانِ ‌الْإِيْمَانَ كَمَا يَعْضِدُ الرَّاعِي الشَّجَرَةَ 

রাখাল যেভাবে গাছ কেটে ফেলে, পরনিন্দা ও চোগলখুরী সেভাবে ঈমানকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে।(শামসুদ্দীন সাফ্ফারীনী, গিযাউল আলবাব, ১/১০৫)


কবরের আযাব তিন ভাগে বিভক্ত

ক্বাতাদা রহ. বলেন

 أَنَّ عَذَابَ الْقَبْرِ ثَلَاثَةُ أَثْلَاثٍ: ‌ثُلُثٌ ‌مِنَ ‌الْغِيبَةِ، ‌وَثُلُثٌ ‌مِنَ ‌الْبَوْلِ، ‌وَثُلُثٌ ‌مِنَ ‌النَّمِيمَةِ 

কবরের আযাব তিন ভাগে বিভক্ত : এক-তৃতীয়ংশ গীবতের কারণে, এক-তৃতীয়াংশ পেশাব থেকে সতর্ক না থাকার কারণে আর এক-তৃতীয়াংশ চোগলখুরীর কারণে হবে। (ইবনু আবীদ্দুনইয়া, আছ-ছামত : ১২৯)


চোগলখোর শয়তানের চেয়েও ক্ষতিকর 

সালাফ থেকে বর্ণিত আছে

عمَلُ النَّمَّامِ أَضَرُّ وأشد مِن عمَلِ الشَّيطانِ؛ فإنَّ عمَلَ الشَّيطانِ بالوَسوسةِ، وعمَلَ النَّمَّامِ بالمواجَهةِ

চোগলখোরের কর্মকাণ্ড শয়তানের কর্মকাণ্ডের চেয়েও ক্ষতিকর ও গুরতর। কেননা, শয়তানের কাজ হল, কুমন্ত্রণা দেয়া। আর চোগলখোর কাণ্ড ঘটায় সরাসরি। (আযযাওয়াজির আ'ন ইক্বতিরাফিল কাবায়ির : ২/৫৭১)

এক ব্যক্তি বিখ্যাত তাবিয়ী ওয়াহাব ইবন মুনাব্বিহ রহ.-এর কাছে এসে বলল, অমুক আপনার ব্যাপারে এটা-সেটা বলে বেড়ায়। তিনি তখন তাকে শাসনের সুরে বললেন

أما وجد الشيطان رسولًا غيرك؟

শয়তান তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বার্তাবাহক পায় নি? (হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/৭১)


চোগলখোর কত সাজানো বাগান বিরান করেছে!

বাস্তবেও দেখা যায় এবং আমার ধারণা এ বিষয়ে আপনাদের সকলেরই কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে যে, চোগলখোরের কর্মকাণ্ড শয়তানের কর্মকাণ্ডের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। কত সাজানো বাগান, কত সুন্দর প্রতিষ্ঠান, কত নুরানি পরিবেশ, কত প্রেমময় সংসার, কত অনুপম ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে এই চোগলখোরের চোগলখুরির কারণে। এমনকি চোগলখোরের চোগলখুরির কারণে একটা দেশও ধ্বংস হতে পারে। যুদ্ধের দামামাও বেজে ওঠতে পারে। এজন্যই হাদীসে বলা হয়েছে

شِرَارُ عِبَادِ اللهِ الْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে নিৎকৃ্ষ্ট চোগলখোর। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৩২৩)

চোগলখোরের কথা মিষ্টি হয়

চোগলখোরের কথা সাধারণত মিষ্টি হয়ে থাকে। এজাতীয় লোক প্রশংসার সুরতে বদনাম, কল্যাণকামিতার সুরতে ক্ষতি করার ব্যাপারে খুব পটু হয়ে থাকে। এজন্য বলা হয়

النميمة نوع من أنواع السحر

চোগলখুরি এক প্রকার যাদু।


চোগলখোর নিমিষে যা ঘটাতে পারে

বিখ্যাত তাবে-তাবিয়ী ইয়াহইয়া ইবন কাসীর রহ. বলতেন

 يفسد النمام في ساعة ما لا يفسد الساحر في شهر

চোগলখোর নিমিষে যা ঘটাতে পারে, যাদুকর মাসেও তাও পারে না। (আলই'লাম : ১/৫৪৫)


রক্তপাত ও বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে চোগলখোরের কারণে  

আতা ইবনুস-সায়িব রহ. বলেন, আমি মক্কা থেকে আসার পর ইমাম শা'বী রহ.—এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! মক্কায় আপনি নতুন কিছু শুনে থাকলে আমাকে বলুন। 

আমি বললাম, মক্কার বিখ্যাত ফকীহ আব্দুর রহমান ইবনু সাবিত রহ.-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, মক্কায় রক্তপাতকারী, সুদখোর ও চোগলখোর বসবাস করতে পারবে না। কিন্তু আমি তার এই কথায় এজন্য বিস্মিত হয়েছি যে, তিনি মক্কায় চোগলখোরকে রক্তপাতকারী ও সুদখোরের সমকক্ষ মনে করলে ন কিভাবে! 

ইমাম শা‘বী উত্তরে বললেন

وما يعجبك من هذا؟! وهل يسفك الدَّم وتركب العظائم إلَّا بالنَّمِيمَة؟

এতে তোমার বিস্মিত হওয়ার কী আছে! রক্তপাত ও বড় বড় দুর্ঘটনা কি চোগলখোরি ব্যতীত ঘটে?(আল-মুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম : ৩/৬৩)


একটি চোগলখোরিকাণ্ড

ইমাম গাযালী রহ. হাম্মাদ ইবন সালামা রহ. সূত্রে একটি ঘটনা লিখেছেন। ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয়। এ থেকে কিছুটা অনুমান করতে পারবেন, একজন চোগলখোর কী ঘটাতে পারে। তিনি বলেন

এক ব্যক্তি গোলাম কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে গিয়েছিল। একটা গোলাম তার পসন্দ হল, বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইল। বিক্রেতা তখন খুবই অল্প দামের কথা বলল। ওই ব্যক্তি চিন্তা করল, এত সুন্দর ও সুঠাম গোলাম কিন্তু দাম এত কম কেন? তাই সে বিক্রেতাকে বলল, এই গোলামের মাঝে কোনো দোষ-খুঁত আছে কি?

বিক্রেতা জানাল, কোনো দোষ-খুঁত নেই; বরং গোলামটির গুণ হল, রাতে ইবাদত করে এবং দিনের বেলা মুনিবের খেদমত করে। তবে একটা ছোট্ট দোষ আছে, তাহল, চোগলখুরি করা।

লোকটি চিন্তা করল, এ আর তেমন কী। এই চিন্তা করে নামমাত্র মূল্যে গোলামটিকে কিনে বাড়িতে নিয়ে আসল।

কিছু দিন যাওয়ার পর গোলামটি তার মুনিবের পরিবারের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠল। কিন্তু তার তো চোগলখুরি করার অভ্যাস। তাই এক দিন মুনিবের কাছে যেয়ে বলল, 'শুনেছেন?'

'কী?' মুনিব জানতে চাইল।

'আমি দেখেছি আপনার স্ত্রী পাড়ার অমুক ছেলের সঙ্গে গোপনে দেখা-সাক্ষাৎ করে।' গোলাম বলল।

এটা শুনে মুনিব ধমক দিয়ে বলল, 'এটা হতে পারে না। আমার স্ত্রী বিশ্বস্ত। আমাদের মাঝে সম্পর্ক খুবই ভালো। সে এ জাতীয় কাজ মোটেও করতে পারে না। তুমি কী না কী দেখেছ। তোমার দেখার ভুল।'

মুনিব কথাগুলো মুখে বলে দিয়েছে ঠিক; কিন্তু মনের মধ্যে কিন্তু স্ত্রীর ব্যাপারে সন্দেহের বীজ তৈরি হয়ে গিয়েছে।


অপর দিকে সে মুনিবের স্ত্রীর কাছে এসে বলল,

'শুনেছেন?'

'কী?' মুনিবের স্ত্রী জানতে চাইল।

'আমি দেখেছি, আপনার স্বামী প্রতিবেশী অমুক মহিলার সঙ্গে গোপনে দেখা-সাক্ষাৎ করে।' গোলাম বলল।

এটা শুনে মহিলা স্বামীর মতই উত্তর দিল, 'এটা হতে পারে না। আমার স্বামী ভালো মানুষ। আমাদের মাঝে সম্পর্কও ভালো। সে এ জাতীয় কাজ মোটেও করতে পারে না। তুমি কী না কী দেখেছ। তুমি ভুল বলেছ।'

স্ত্রী কথাগুলো মুখে বলে দিয়েছে ঠিক; কিন্তু তার মনের মধ্যেও কিন্তু নিজের স্বামীর ব্যাপারে সন্দেহের দানা বিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

আর এটা তো জানা কথা যে, দাম্পত্যজীবনের অশান্তির জন্য অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই, এই সন্দেহ-রোগই যথেষ্ট। এবার তাদের মাঝে অশান্তি-ঝগড়া সব সময়ে লেগেই থাকত। আর এই সুযোগটাই চোগলখোর গোলাম কাজে লাগালো। একদিন মুনিবের স্ত্রীর কাছে গিয়ে সে বলল,

'আপনি তো আমার আগের কথা বিশ্বাস করেন নি। এখন তো দেখতেই পাচ্ছেন যে, আপনার স্বামী আপনাকে আগের মত ভালোবাসে না। যা কিছু হচ্ছে, ওই প্রতিবেশী মাহিলার কারণেই হচ্ছে। এখন আপনি যদি স্বামীকে আগের মত একান্তভাবে পেতে চান, তাহলে এক কাজ করুন, আজ রাত তার ঘাড় থেকে কিছু পশম নিয়ে আমার কাছে এনে দিন। পশমগুলো দিয়ে আমি আপনার জন্য তাবিজের ব্যবস্থা করে দিব। ব্যবহার করবেন। দেখবেন, আপনাদের সম্পর্ক আগের মত হয়ে যাবে।'

অপর দিকে মুনিবের কাছে গিয়ে বলল,

'আপনি তো আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। এখন তো নিজেই দেখতে পাচ্ছেন যে, আপনার স্ত্রী আপনার নেই। এখন এও শুনেছি, সে ওই যুবককে নিয়ে আপনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে। যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয়, তাহলে অমুক রাতে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকবেন। তারপর দেখবেন, কী হয়!'

এবার স্বামী কথিত ওই রাতে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকল। স্ত্রী মনে করল, স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই সে ক্ষুর বা ব্লেড নিয়ে স্বামীর ঘাড়ের চুল কাটতে গেল। স্বামী মনে করল, গোলামের কথাই তো ঠিক। তার স্ত্রী তাকে ঘুমের ভেতরে হত্যা করতে চাচ্ছে। তাই সে খপ করে স্ত্রীর হাত ধরে ফেলল এবং রাগের মাথায় তাকে এমনভাবে আঘাত করল যে, সে সেখানেই মারা গেল।

এই ঘটনা যখন স্ত্রীর বাবার বাড়িতে পৌঁছল তখন ওই বাড়ির লোকজন দৌড়ে আসল এবং উক্ত স্বামীকে মেরে ফেলল। এবার শুরু হল, দুই গোত্রের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ। (ইহয়াইয়ু উলুমিদ্দীন : ৩/১৫৮)


চোগলখোর বিশ্বাসঘাতক হয়

এ কারণেই হাসান বসরী রহ. বলতেন

من نمَّ إليك نمَّ عليك

যে ব্যক্তি তোমার কাছে অন্যের কথা লাগায়, জেনে রেখ, সেও তোমার কথা অন্যের কাছে লাগায়। (ইহয়াইয়ু উলুমিদ্দীন : ৩/১৫৬)


মাটির দ্বিতীয় গুণ: ধারণ করা, গ্রহণ করা

মাটির দ্বিতীয় গুণ হচ্ছে, ধারণ করা, গ্রহণ করা, হজম করা। আপনি পানি ঢালবেন মাটি তা গ্রহণ করবে। আপনি কিছু একটা মাটিতে ফেলেন রাখবেন, সে তা নিজের মাঝে এমনভাবে ধারণ করে নিবে যে, কিছু কাল পর বস্তুটিকেও মাটি বানিয়ে ফেলবে। মাটির মাঝে ধারণ করা ও হজম করার এই চমৎকার গুণটি বিদ্যমান। সুতরাং এই গুণটি আমাদের মাঝেও নিয়ে আসতে হবে। 


ফুলের পরশে মাটি হল সুবাসিত 

মাটির এই চমৎকার গুণটি শেখ সা’দী রহ. অপূর্ব অনবদ্য ছন্দভঙ্গির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন

گِلی خوشبوی در حمام روزی

رسید از دست محبوبی به دستم

'একদা গোসলখানায় মাটির একটি ঢেলা এক বন্ধুর হাত হয়ে আসল আমার হাতে। হাতে নিয়ে শুঁকে দেখলাম অফুরন্ত খুশবু।'

بدو گفتم که مشکی یا عبیری

که از بوی دلاویز تو مستم'তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি মেশক নাকি আম্বর? কেননা, তোমার প্রাণস্পর্শী সুবাসে মাতাল হলো আমার অন্তর!'بگفتا من گِلی ناچیز بودم

و لیکن مدّتی با گُل نشست'মাটির ঢেলা বলল, এসব আমি কিছু নই, আমি ছিলাম অতি তুচ্ছ কাদামাটি। তবে কিছুকাল ফুলের সঙ্গী হয়ে কাটিয়েছি।' کمال همنشین در من اثر کرد

وگرنه من همان خاکم که هستم

'আপন সাথীর পূর্ণতার গুণে আমি প্রভাবিত । নচেৎ আমি তো সেই মাটি, এখনো অতি তুচ্ছ।'

তো দেখুন, ফুল বাগানের ফুল মাটিতে ঝরে পড়েছিল। ফুলের ঘ্রাণ মাটি গ্রহণ করে নিজের মাঝে ধারণ করে নিয়েছিল। ফলে মাটিও সুবাসিত হয়ে গিয়েছিল।   


সত্য গ্রহণ করতে হবে

সুতরাং ন্যায় ও সত্য যার মুখ থেকেই বের হোক না কেন, গ্রহণ করতে হবে। এমনকি নিজের বিরুদ্ধে গেলেও হজম করে নিতে হবে। যা কিছু সুন্দর তা ধারণ করে নেয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। কেউ সংশোধনের নিয়তে কিছু বললে তা উদার মনে গ্রহণ করে নিতে হবে। আল্লাহর তাওফীকে মাটির এই গুণটিও আমাদের মাঝে এসে যাক।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন

اسْمَعُوا وأَطِيعُوا وإنِ اسْتُعْمِلَ حَبَشِيٌّ كَأنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَةٌ

তোমরা শোন ও গ্রহণ কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে নেতা নিয়োগ করা হয়—যার মাথা কিসমিসের মতো। (বুখারী : ৬৯৩)


সত্য শয়তানের নিকট থেকেও গ্রহণ করা যায়

সত্য তো এমন যে, এটি শয়তানের নিকট থেকেও গ্রহণ করা যায়। হাদীসে আছে, এক বার রাসূল ﷺ আবু হুরায়রা রাযি.-কে বায়তুল মালের উপর পাহারাদার নিযুক্ত করেছিলেন। এক চোর চুরি করতে এলে আবু হুরায়রা রাযি. তাকে ধরে ফেললেন। চোরটি তার নিকট ক্ষমার চাইল এবং নিজ দরিদ্রতার কথা প্রকাশ করল। তখন তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু চোরটি দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার চুরি করতে এল। প্রত্যেকবার আবু হুরায়রা রাযি. তাকে ধরে বললেন, তোমাকে রসূলের দরবারে পেশ করবই। 

চোরটি বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে কুরআনের এমন একটি আয়াত শিখিয়ে দেব, যা পাঠ করলে শয়তান তোমার নিকটবর্তী হবে না।

আবু হুরায়রা রাযি. বললেন, তা কোন আয়াত? 

চোরটি বলল, আয়াতুল কুরসী। 

আবু হুরায়রা রাযি. এবারও তাকে ছেড়ে দিলেন। অতঃপর তার দেখা এই ঘটনা রসূল ﷺ-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, তুমি জান কি, কে এ কথা বলেছে? ও ছিল শয়তান। সে বলেছে সত্যই অথচ নিজে ভীষণ মিথ্যুক।

এখান থেকে বোঝা যায়, সত্য এমন যে, এটি শয়তানের নিকট থেকেও গ্রহণ করা যায়।


সত্য সব সময় উপকারী

অনেক সময় সত্য আপনাকে ধাক্কা দিতে পারে। আপনার ত্রুটিগুলো প্রকাশ করতে পারে। আপনার অহংকে আঘাত করতে পারে। তবুও তা উদার মনে গ্রহণ করে নিতে হবে। কেননা, সত্য সব সময় উপকারীই হয়।

ইমাম শা‘বী রহ. বলেন

 عَلَيْكَ بِالصِّدْقِ حَيْثُ تَرَى أَنَّهُ يَضُرُّكَ، فَإِنَّهُ يَنْفَعُكَ. وَاجْتَنِبِ الْكِذْبِ فيِ مَوْضَعٍ تَرَى أَنَّهُ يَنْفَعُكَ، فَإِنَّهُ يَضُرُّكَ 

তুমি সত্য গ্রহণ কর। কেননা, সত্য তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে মনে করলেও মূলতঃ তা তোমার উপকারই করবে। আর তুমি মিথ্যা থেকে বেচেঁ  থাকো, কেননা মিথ্যা তোমাকে উপকৃত করবে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে তা তোমার ক্ষতিই করবে। (জাহেয, আল-বায়ান ওয়াত তাবয়ীন : ২/১৩৯)


আমাদের অবস্থা

অথচ আমাদের অবস্থা কেমন? আমাদের শায়খ ও মুর্শিদ মাহবুবুল ওলামা হযরত পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী রহ এর নিকট ছোট্ট একটি গল্প শুনেছি, এক ছেলে তার মাকে বলল, মা! বলো তো খরগোশের পা কয়টা? মা বলল, চারটা। ছেলেটি বলল, মা! তুমি ভুল বলেছ, আমি বাজি ধরলাম যে, খরগোশের পা তিনটা। মা বলল, বেটা! তুমি ভুল বিষয়ে বাজি ধরেছ। তুমি তো হেরে যাবে। ছেলেটি উত্তর দিল, মা! আমি তো হেরে যাব তখন, যখন মেনে নিব। আমি মানবোই না। আমি বলেই যাব, খরগোশের পা তিনটা।

Post a Comment

0 Comments